ফেনীতে নতুন করে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় আসন্ন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার কার্যকরী প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এবং বন্যা প্রশমনে বিভিন্ন লিখিত দাবি জানিয়ে ফেনীর সাধাণ জনগনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মন্ত্রনাললের উপদেষ্টা এবং সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আজিজুর রহমান রিজভী।
স্মারকলিপিতে তিনি গতবছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার অভিজ্ঞতার আলোকে এবছর যেনো পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বন্যাকালীন ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়, উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রমে আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব স্মারকলিপির সকল দাবির প্রেক্ষিতে গৃহীত পদক্ষেপ এর কথা বিস্তারিতভাবে জানান এবং অন্যান্য সকল এরেঞ্জমেন্ট এর আপডেট দেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
উল্লেখ্য যে উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম ( স্পিড বোট, ফ্লোটিং বোট, টর্চলাইট ,লাইফজ্যাকেট, ওয়াকিটকি) কেনা হয়ে গেছে এবং শিগগিরই জেলাতে পাঠানো হবে।
বন্যাকালীন সময়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্প ,গর্ভবতী নারীদের জন্য এয়ার এম্বুলেন্স ,এন্টিভেনমের স্টক ,স্বেচ্ছাসেবকদের ট্রেইনিং এর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
দাবিগুলো নিম্নরুপ :
১. জরুরি ভিত্তিতে বর্তমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কার, প্রস্তুত রাখা ও সেগুলোর পানি, স্যানিটেশন, খাবার ও বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা। পাশাপাশি গতবছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সম্ভাব্য আরো আশ্রয়কেন্দ্র চিহ্নিত করা।
২. বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি এবং ৬ টি উপজেলায় উদ্ধারকার্যে ব্যবহৃত সরঞ্জাম (স্পিড বোট, ফাইবার বোট/ফ্লোটিং বোট, ওয়াকিটকি, লাইফ জ্যাকেট, টর্চলাইট, হ্যান্ডমাইক, রেইনকোট) এর ব্যবস্থা।
৩. খুব প্রতিকূল উদ্ধারকার্যে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড মোতায়েন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েন।
৪. জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওয়াটার পিউরিফায়ার, শিশুখাদ্য, মোমবাতি ও ওষুধ মজুদের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ।
৫. প্রতিটি উপজেলায় বা সুবিধাজনক স্থানে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন এবং গর্ভবতী নারী ও অল্প বয়সী শিশুদের জন্য বিশেষ সেবা নিশ্চিতকরণ; সাপের উপদ্রব মোকাবেলায় এন্টিভেনম সরবরাহ।
৬. মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল রাখার প্রস্তুতি; পাশাপাশি V-SAT, Portable Satellite Internet, Handheld Wireless, Satellite Phone এর ব্যবস্থা এবং BTRC এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
৭. জাতীয় ও স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা এবং উজানের ঢল ও নদীর পানি পর্যবেক্ষণে ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং সেল গঠন।
৮. ভারত থেকে পানি ছাড়ার সম্ভাবনা থাকলে তা অন্তত ৭২ ঘণ্টা পূর্বে বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা।
৯. শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের ট্রেইনিং দিয়ে Community Flood Response Team গঠন এবং তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে প্রস্তুত রাখা।
১০. গবাদিপশু ও কৃষিজ সম্পদ রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি।
১১. বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী বাঁধ পর্যবেক্ষণ টাস্কফোর্স গঠন।
১২. বন্যাপ্রবণ এলাকার বাঁধ বা ভাঙনপ্রবণ স্থানে জরুরি মেরামত (জিও ব্যাগ, বালুর বস্তা ইত্যাদি ব্যবহার)।
১৩. সড়কপথ ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা।
